বর্ষাকালে নদ-নদী, খাল-বিল হাওর-বাওড় গুলো হয়ে যায় কানায় কানায় ভর্তি আর এই সময়টাতে যদি একটি ছইওয়ালা নৌকাতে মোটামুটি এক দিন কনোভাবে পানিতে ভেসে কাটিয়ে দিতে পারো তাহলে তো আর কথাই নেই। কি যে সেই মজা! যে না গিয়েছে সে কখনোই বুঝবে না।
ভ্রমন করাই বা না ভাল লাগে সেটা যদি হয় নৌকা ভ্রমন তাহলেত কোনো কথাই নেই। ভ্রমনের একটা অনুভূতি প্রত্যেক মানুষের মনের মধ্যেই থাকে। তবে অপেক্ষা করতে হয় তা জাগরনের। এই অনুভূতি গুলো তখনি জেগে উঠে যখন আমরা একই কাজ বার বার করতে গিয়ে বিরক্ত হই। সেটা হতে পারে অফিসের কাজ আবার হয়ত বাসার কাজ । আর তখনি আমাদের মন ছুটে যায় প্রকৃতির সেই তেপান্তরে রুপকথার গল্পের মত। আর তা পরিপূর্ণ হয় তখনি যখন সেখানে থাকে রুপকথার রাজকন্যা আর মনেয় এই অনুভূতি গুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্যই আমরা মনের মানুষকে সাথে নিয়ে ছুটে যাই।
ছোট বেলায় বাব-মার সঙ্গে বলদগিরা খেয়ায় চড়ে গৌমতির ঐ পাড়ে বাবার ফুফির বাড়ি চলে গেছি। আবার কখনও একা চলে গেছি বহুবার। সেই সময়কার স্বপ্নতুল্য ভ্রমন আমার মনে এমন ভাবে গেঁথে গেছে যে বিল দেখলেই মনে হয় ভেসে চলি। আর বিলও আমায় নিরাস না করে ভাসিয়ে নিয়ে চলে!
বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। আকাশে মেঘেদের ঘনঘটা। মেঘ-বৃষ্টির সঙ্গে পেঁজা তুলোর মেঘ ভাসা নীলাকাশ। বর্ষার সঙ্গে আমাদের নাড়ির টান। আরেক টান আমাদের বিলের সঙ্গে। বর্ষায় বিল পূর্ন যৌবনবতী। এই সময় নৌকায় চড়ে বিলেতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই আলাদা। এমন এক বৃষ্টিভেজা দিনে বের হলাম নদী ভ্রমনের জন্য।
আসলে বাসা থেকে বের হয়েই মাঝি নূরুলইসলামের কথা মনে পড়ে যায়। বি -বাড়িয়া গঙ্গাসগর তার বাসায় গুড়-মুড়ি আর বিড়ি খাওয়ার মধুর স্মৃতি ভুলি কী করে! আমরা আজ বা -বাড়িয়া গঙগাসগরে বেড়াবো!
নূরুলইসলাম মাঝিকে খঁজে পাওয়া গেলনা, অন্য একজন মাঝির সঙ্গে নৌকায় চড়ে বসি। নৌকা গতি পেতেই সামনে চেয়ে দেখি একটি বাঁশের ভেলা এগিয়ে আসছে। মুখ থেকে অস্ফুট সুর-বাহ! এভাবেই আমাদের নৌকা তরতর করে এগিয়ে চলে। উচ্ছাসে ভরা মগড়া/ গঙগাসাগর সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। এপথে আামি শীতের প্রচন্ড রূপ দেখেছিলেম। এবার এসেছি বর্ষায়। পনকৌড়ির দল আর ছুটে চলা মাছরাঙা অতিমনোহর। চলতি পথে অনেক ভেসাল দৃশ্যত; হল। আর জাল নিয়ে ছুটে চলা একদল শিশু-কিশোর। বালুর নৌকা, জেলে নৌকা, মাছের ডিঙ্গি নাও, সাম্পান, কোসা নৌকা। আসলে কি রেখে কি বলি, সঙ্গে নাও তো ছিল অনেক।, আর এভাবেই আমাদের নৌকা এগিয়ে চলে। এরমধ্যে হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে এল। তারপর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির সৃষ্টি বাতাসের তীব্রতা। একটু পরই আকাশ থেকে মেঘ সরতে শুরু করলে আমরাও ফেরার পথ ধরলাম।
No comments:
Post a Comment