মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর ডায়েরি
(মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর মাস সাধারণত দুইভাবে শুরু হয়। এক. মাসের ১ তারিখ থেকে। দুই. মাসের ২০ তারিখের পর থেকে। এ ডায়েরিতে আমরা দ্বিতীয়টি পাই)
২১ তারিখ—মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে মাসের বাকি দিন চলতে হবে। রিকশা না, এখন থেকে বাসে যাতায়াত।
২৫ তারিখ—চার দিনে এক হাজার টাকা শেষ। কোন দিক দিয়ে কী হলো কিছুই বুঝলাম না! আড্ডায় নিজ উদ্যোগে বিল দেওয়া বন্ধ।
২৭ তারিখ—মানিককে কল দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না। সে কি আমার টাকা ফেরত দেবে না? আড়াই মাস আগের টাকা—যত্তসব!
২৮ তারিখ—মনোজের কাছ থেকে এক হাজার টাকা ধার নিলাম। দুই হাজার চাইছিলাম। ব্যাটা ফাজিল বাকি এক হাজার দিল না। বেতন হলেই দিয়ে দেব। সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। দিনে তিনটা।
২৮ তারিখ—কাল থেকে সিগারেট বন্ধ।
২৯ তারিখ—বৃহস্পতিবারেও বেতন হলো না। আগামী দুই দিন ব্যাংক বন্ধ। নাহ্, কাল থেকে সিগারেট বন্ধ।
০১ তারিখ—সন্ধ্যা সাতটায় অ্যাকাউন্টে বেতন এল। এসবের কোনো মানে হয়? বাসে যাতায়াত করা দুর্বিষহ ব্যাপার। একটা মোটরসাইকেল কিনতে হবে। ব্যাংক লোনের ব্যাপারে প্রশান্তর সঙ্গে কথা বলা দরকার। আপাতত রিকশা ছাড়া উপায় কী?
০৬ তারিখ—প্রতি মাসেই বাজারের লিস্ট বড় হচ্ছে, এভাবে আর থাকা যায় না। পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল মানে কী! তেল কি কমোডে ব্যবহার হচ্ছে?
০৭ তারিখ—ফরমালিন দেওয়া মাছ খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো।
০৮ তারিখ—বাসাভাড়া, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ বিল দেওয়া শেষ। টাকাও শেষ। পেপারটা বাড়িতে বাড়তি! আগামী মাস থেকে পেপার বন্ধ।
০৯ তারিখ—টাকার জন্য মনোজ ফোন দিয়েছিল। ধরিনি। আগামী মাসে বেতন হলেই দিয়ে দেব। মানিকের ফোন বন্ধ।
১১ তারিখ—এ চাকরি আর করাই যাবে না। সব কাজ কি আমি একাই করব?
১৪ তারিখ—আগামীকাল সাগরের বিয়ে। বিয়ে করার আর সময় পেল না, একেবারে মাসের মাঝখানে! এদের কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই!
১৬ তারিখ—মন অত্যন্ত খারাপ। ভুল করে রিকশাওয়ালাকে ১৫ টাকা বেশি দিয়ে দিয়েছি।
১৮ তারিখ—মাসের মধ্যখানে চিনি শেষ হয়ে যাওয়ার মানে কী? এক বেলার বেশি তো চা খাই না! পেঁয়াজ নেই।
২০ তারিখ—এই জীবনের মানে কী? সব ছেড়েছুড়ে দেশান্তরি হব। একটা মোটরসাইকেল কেনা দরকার। লোনের ব্যাপারে প্রশান্তর সঙ্গে কথা বলতে হবে।
(আগ্রহী পাঠকেরা, পরের মাসের ডায়েরি পড়তে চাইলে আবার প্রথম থেকে পড়া শুরু করতে পারেন।)
No comments:
Post a Comment