সংগ্রহকৃত,
গন্তব্যহীন পথে হাটার মাঝে একধরনের আনন্দ আছে l কোনো তাড়া নেই ..,যখন ইচ্ছা চলা আবার ইচ্ছা হলেই থেমে যাওয়া .. মাঝে মাঝে থেমে না গেলে জীবন কে উপলব্ধি করা যায়না ..,জীবন কে উপলব্ধি করতে হলে হটাত হটাত থেমে যেতে হয় ..এই ফাকে পাওয়া না পাওয়ার যোগ বিয়োগ করা যেতে পারে .. আপাতত এই টাইপ উচ্চ পর্যায়ের চিন্তা ভাবনা করতে করতে আমি আমার বিখ্যাত হাটা শুরু করেছি ...গন্তব্য আপাতত জানিনা ..! আজ অবশ্য পূর্নিমা ..,মধ্যরাত এখন ..এতক্ষণে আকাশ ভেঙ্গে জোছনা নামার কথা ,কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাঝে মাঝে উটকো কিছু মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিয়ে যাচ্ছে ..!
চাঁদের সাথে মেঘের লুকোচুরি দেখতে খুব একটা খারাপ লাগছে না...! কোনো বিচিত্র কারণে নিজেকে বেশ সুখী মানুষ মনে হচ্ছে .. কারনটা কি বুঝতে পারছিনা ..! হাটতে হাটতে কসবা রেললাইনের কাছা কাছি এসে হটাত চোখে পড়ে গেল ..বেশ পরিপাটি চেহারার এক যুবক রেল লাইনের উপর হাত পা ছড়িয়ে বসে আছে ...! আত্মহত্যা টাইপ কেস না তো ..?! আমি নিজে চোখের সামনে কখনো কাউকে আত্মহত্যা করতে দেখি নাই ..,দেখা যাক এবার এই সুযোগ টা মেলে কিনা ..! যা ভাবা তাই কাজ আমিও তার পাশে বসে পড়লাম..! ভুত দেখার মত চমকে উঠে ছেলেটি বলে বসলো ..ভাই আপনি ..?আপনি কে ..? ছেলেটির চোখে ভয় মিশ্রিত কৌতুহল ..! মানুষের ভীত কৌতুহলী চোখ দেখতে আমার ভালই লাগে ..নিজেকে অনেক ইম্পর্টেন্ট পারসন মনে হয় ..! - আমি..? # আমি হিমু ..বলতে পারো নিশি মানব ..!মাঝে মাঝে নিশি রাতে আমার আবির্ভাব ঘটে ..! তা তুমি এত রাতে রেল লাইনের উপর কেন ?সুইসাইড কেস নাকি ..? ভালবাসার কারণে পরান জ্বলিয়া যায় অত:পর ঠান্ডা করার প্রচেষ্টায় মৃত্যুবরণ ..,ঘটনা কি এই নাকি...?? - জ্বি অনেকটা তাই..নিচু স্বরে বলল ছেলেটি... জীবন অসহ্য লাগছে ..,সুন্দর আর ভালো কিছু ধরে রাখার ক্ষমতা বিধাতা আমাকে দেয়নি .. - আচ্ছা বলতে পারেন জীবন এত দীর্ঘ কেন ..? # হুম কথা খারাপ বলনি ..জীবন অতিষ্ঠ লাগলে সেই ক্ষেত্রে জীবন থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন অবশ্যই নেয়া যেতে পারে ... তা সুইসাইড যে করবে সুই সাইড নোট রেডি তো ..?না হলে মানুষ কিভাবে বুঝবে প্রেম ঘটিত কারণে এই আত্মহনন ..??নরমাল এক্সিডেন্ট কেস হয়ে যাবে কিন্তু ..এত কষ্ট করে মারা যাবে আর পাবলিক এইটারে দুর্ঘটনা হিসেবে জানবে ..এর পেছনে যে প্রেম আছে সেটা জানবেনা ,তাতো হতে দেয়া যায় না.... চল এক কাজ করি একটা সুই সাইড নোট লিখে ফেলি আমরা আর তার নিচে বোল্ড অক্ষরে লিখে দেয়া হবে .."হে পৃথিবী বিদায় "! কথা শেষ হতে না হতেই দেখি ছেলেটা ফিচ ফিচ করে হাসছে ... # আচ্ছা কখন ট্রেনের নিচে পড়বে বলে ঠিক করেছ ..? - ভোর ৪ টা ২৫ এ একটা ট্রেন যায় এখান দিয়ে ..সেই ট্রেনটায় .. # হুম খুব ভালো ..এখন বাজে রাত ১ টা ১৭ তোমার হাতে এখনো ৩ ঘন্টা আছে ... দেখো একটু পর জোসনার আলোতে চারপাশ প্লাবিত হয়ে যাবে ..আজ পূর্নিমা তো তাই .. অপার্থিব এক সৌন্দর্যে পুরো শহর সেজে উঠবে .তোমার জীবনের শেষ জোসনা হয়ত ..মৃত্যুর কাছাকাছি থেকে জীবনের সৌন্দর্য উপভোগ টাইপ ব্যাপার হতে পারে ... যাই হোক অনেক্ষণ ধরে হাটছি কথা বলার লোক পাচ্ছিনা..,ফুসফুস ফুলে উঠেছে কথার চাপে ..মৃত্যুপথ যাত্রী কারো সাথে কথা বলার এক্সপেরিয়েন্স খারাপ হওয়ার কথা না... আমার ও অবশ্য আজ বিশেষ এক কাজ আছে... জোসনা দেখার নিমন্ত্রণ ..! গঙ্গা সাগর লেকের পাশে কোনো এক বাড়ির দক্ষিণের জানালা খুলে কোনো এক মায়াবতী আমার অপেক্ষায় থাকবে ..একসাথে জোছনা দেখবে বলে..! এখনো অনেক সময় বাকি ..চল জোসনায় ভিজি ..তোমাকে ঠিক সময় মত রেল লাইনে রেখে আমি আমার মায়াবতীর কাছে চলে যাব !!! - আসলে ভাইজান ওকে আমি অনেক ভালবাসি ,কিভাবে যে কি হলো সে হটাত করেই অন্য মানুস হয়ে গেল ..৪বছরের সম্পর্কটাকে ভেঙ্গে দিল ..,আমার চেয়ে ভালো কেউ তার জীবনে এসেছে হয়ত তাই..এসব চিন্তায় এবার বি .সি .এস টাও দেয়া হয় নাই ... বেকার মানুস এখনো.. আসলে ওর কি দোষ বলেন ..,একটা পাগলেও তার ভালো মন্দ বোঝে ..সব দোষ আমার ভাগ্যের ..! এরপর দীর্ঘ নিরবতা .. হটাত করেই মেঘ সরে গেল ..জোসনায় থৈ থৈ করছে শহর তলি .. # আচ্ছা তুমি কি জানো ?আমরা সবসময়ই অপেক্ষায় থাকি ..! কেউ হয়ত তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে এই শহর অথবা পৃথিবীর কোনো এক প্রান্তে .. কিন্তু তোমার যে অনেক তাড়াহুড়া..! - মানে ..? # মানে খুব সহজ ... ৯ টা -৫ টা অফিস করে আসলে .. কেউ একজন দীর্ঘ প্রতিক্ষায় দরজার ওপাশে ওপাশ থেকে ভাবছে ৫ টা বাজছেনা কেন ? একটা বেলের শব্দের অপেক্ষায়... ঘরে ঢোকা মাত্র চুড়ির রিনঝিন শব্দের সাথে এক গ্লাস পানি এগিয়ে আসলো .. ! - আচ্ছা জীবনটা তো এত খারাপ না ...! # ভালবাসা জিনিসটাই এমন ..প্রথমে একটা চমত্কার নকশা তৈরী করে ..আর প্রকৃতি এটিকে কাঁচি দিয়ে সমান দুইটা ভাগ করে কেটে দেয় ... এর এক অংশ দেয়া হয় ছেলেটিকে আর অপর অংশ মেয়েটিকে ... এর পর ছেলেটি ব্যাকুল হয়ে খুঁজে ফেরে বাকি অংশ... মেয়েটিও তাই ..! যখন তারা নকশার কাছাকাছি কিছু দেখে তখন তারা প্রেমে পড়ে যায় ... কিন্তু অবশেষে যখন দেখা যায় নকশাটি ভুল ..! তখন ভয়াবহ হতাশায় ..বিচ্ছেদ ..! কারণ প্রকৃতি চায়না আসল ২ টি ছেড়া নকশা একত্রিত হয়ে প্রকৃতির চলমান ধারা ব্যাহত করুক ..! প্রকৃতি ভেবেই নিয়েছে মানুষ এখনো তার জন্য তৈরী হয় নি ..! তারপরেও মাঝে মাঝে আসল নকশা দুটি একত্রিত হয়ে প্রকৃতিকে হারিয়ে দেয় ...! - চমত্কার থিউরি ..! কিন্তু কার ..? # কার আবার আমার থিউরি ,হিমুর থিউরি..! হটাত করেই ছেলেটি বলে উঠলো ..ভাইজান আপনার মায়াবতী কে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ..নিশ্চয়ই অসম্ভব রূপবতী ..নাহলে তো আপনার এমন পাগলামি করার কথা না...
# রূপবতী কিনা তাতো জানিনা..,চাঁদ কে যেমন দূর থেকে দেখি তেমনি তাকেও ..!
শুধু জানি এই শহরে যেদিন আকাশ ভাঙ্গা জোসনায় প্লাবিত হয়ে যায় সেদিন লেকের ধারের ওই বাড়িটার জানালায় মায়াবী এক মুখ আমার অপেক্ষায় থাকে ...!!
আচ্ছা ঘড়িতে প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে ..কথা ছিল তোমাকে রেল লাইনে রেখে আসবো..তুমি থাকবে মৃত্যুর অপেক্ষায় আর আমি অপেক্ষায় থাকব আমার মায়াবতীর ..
আসলে আমরা সবাই কিছু না কিছুর অপেক্ষায় জীবন কাটিয়ে দেই ..অপেক্ষার অপর নামই জীবন...!
সে কোনো উত্তর দিচ্ছেনা ..,
চুপচাপ ..!কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আমি উল্টো দিকে হাটা ধরলাম ..!
আমার সেই বিখ্যাত হাটা..!
হাটতে হাটতে টের পেলাম পিছন পিছন কেউ আসছে শব্দ পাচ্ছি ..!
আমি জানি কে আসছে...
পিছন ফিরে না তাকিয়েও বলতে পারব কে..!
সেই ছেলেটি ..!
আজ এই শহর জোসনায় ভেসে যাবে ..সেই সাথে এক যুবক আজ নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করবে ..প্রতিক্ষায় নতুন সপ্ন রচনা করবে কোনো এক মায়াবতী কে নিয়ে ..যাকে সে কখনো দেখেনি ...!
আসলে আমরা কেউ একা থাকার জন্য জন্মাইনি..
প্রকৃতি আমাদের হাতের পাঁচ আঙ্গুলের ফাকা স্থান পূরণ করার জন্য অন্য কোনো হাতের পাঁচ টি আঙ্গুল তৈরী রেখেছে ..!!
আর সেই ছেলেটি আমি জানি জোসনা আর জীবনের সৌন্দর্য তার রক্তে ঢুকে গেছে ...
৯ টা থেকে ৫ টা ব্যস্ত জীবনের পর কোনো এক মায়াবতীর ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয়া স্পর্শের জন্য সে অপেক্ষায় থাকবে....
এর পর আমি নিশ্চিত সে বলতে বাধ্য হবে .."আচ্ছা জীবন এত ছোট কেন ..?"
ঢাকা শহর আজ ভেসে যাক জোসনায় আর ভালোলাগায়.......
ভোর ৪ টা পার হয়ে গেছে ...
অনেকটা পথ বাকি ......
আমার পথ বুঝি ফুরায় না ....
[ উত্সর্গ :হুমায়ুন স্যার কে ...]
ব্লগার বুলবুল আহম্মেদ জয়
No comments:
Post a Comment