• Breaking News

    Unordered List

    Wednesday, March 15, 2017

    সেকাল একাল।

    সময় মানুষের জীবনে পরিবর্তনের এক অদৃশ্য রেখা টেনে দেয়। এই অদৃশ্য রেখার নিষ্ঠুর চৌকাট মারিয়ে কেউ কেউ ভীতরে যায়, কেউ আবার আশাহত হয়ে এপাশ ওপাশ খুঁজে ফেরে। কেউ আবার নিস্ফল আস্ফালন করে চলে কল্পনায়। বয়স বারে বলেই দিগন্তে মিশে যাওয়া আকাশ দেখলে এখন হাঁসি পায়। মাঝে মাঝে মনের অজান্তেই বলে চলি ধুর কতই না বোকা ছিলাম আমি। মিছাই কেমন স্বপ্ন নিয়ে ছুটেছি নীল আকাশের টানে।

    লাঠি হাতে সারাদিন ঘাস ফড়িঙের পিছে ঘুরেছি। আর এখন, ডানা কাঁটা মায়াবিনী ফড়িঙেরা কেমন করে চোখের সামনে ঘুরে বেরায়। ধরার সাধ জাগে মনে, কিন্তু সাধ্যি নাই। খাচায় বন্দি পাখির বদলে তখন চিন্তা করেছি আস্ত একটা জঙ্গল থাকবে আমার, নিতান্তই আমার। আর এখন, এখন আমার মাথার উপর খোলা আকাশ। বেরসিক বৃষ্টি-বাদলও লেংটা করে দিয়ে যায় সুযোগ পেলে, বোকার মতো মুখ টীপে হাঁসি কিছু করতে পারি নে। দিগন্তে মেশা আমার সেই আকাশ, ঘাস ফড়িঙ, এমন কি জঙ্গল শুধুই অতিত, শুধুই।

    মাছ ধরা নেশাতে পরিণত হলে পাড়ার বড় ভাই ডাকা শুরু করে বুলু বলে। মনের মধ্যে কেমন যেন আলোড়ন। এই বুঝি আমার পার্বতী এসে পিছন থেকে হাত চেপে ধরে। কল্পনায় একটা অবয়বও তৈরি করে ফেলেছি। অনেক দেরিতে হলেও বুঝতে পারলাম, এতদিন আমি ছিলাম আসলে চণ্ডীদাস, রজকিনীর মাঝে পার্বতীকে খুজেছি মাত্র।
    মাঞ্জা মারা সুতা দিয়ে ঘুড়ির সাথে আমার দারুন প্রেম। কষ্টে বুকটা ফেটেছে মাঝে মাঝে। মুচকি হেঁসে হেলে দুলে লাটাই কে হাতে ফেলে ছুটে চলেছেন দূর প্রানে। আর এখন, চঞ্চলা প্রেয়সীরা চোখের সামনে অন্যর হাত ধরে চলে যায়, সিগারেটের বাঁটের সাথে রেখে যায় কিছু স্মৃতি। তার গমন পথের দিকে চেয়ে না থেকে, অপেক্ষা, শুধুই অপেক্ষা, নতুন আরেক জন আসবে বলে।

    প্রথম যখন শাপলার প্রেমে পরলাম, বয়স আর কতোই বা হবে, এই ধর আঠেরো। মা বলে আরও কম, বারো কি তের। বয়স দিয়ে কি আর যৌবন কে ধরে রাখা যায়? কতোই না স্বপ্ন দেখেছি ঘড়ের কনে বসে বসে। স্বপ্ন দেখেছি জামদানী শাড়ি, কপালে কালো টীপ, গলায় গজমোতির হাঁর। কাট ফাটা দুপুরে সব কিছু ভুলে সে আমার ঘড়ের দরোজায় কড়া নারছে, কড়া নারছে আলত করে। আর আমি, আমি কফির মগ হাতে নিয়ে দরোজা খুলে দেই। সে অভিযোগের সুরে আমার কাছে জানতে চায় গতকাল তুমি এলে না কেন সন্ধ্যায়? মা তোমার জন্য আঁচার বানায়ে রেখেছিল, আবেদন টা ঠিক যেন অমিতের লাবণ্য। আমি দু’হাতে কাছে টেনে নিয়ে আলত করে কপালে চুমু দেই। সে লজ্জায় লাল হয়ে যায়। স্পষ্ট দেখতে পাই তার চিবুক কতো দ্রুত রঙ বদলায়। সে বসে আছে আমার খাটে। না খাট নয়, পালঙ্ক। আমার সম্পদ বলতে যে ঐ খাটই? তবে তাকে পালংক বলতে দোষ কি? সূর্যের আলো ভাঙ্গা চালের ফাঁক দিয়ে এসে তার কপাল ছুয়ে যায়, লোভী চোখ আমার চক চক করে উঠে। হায়....  সবিকল্প।

    কিন্তু হায়, একি, যতই দিন যায় স্বপ্ন আমার কেমন যেন হাওয়ায় মিলাতে থাকে। দিন দিন মরিচা পরে ফিকে হতে থাকে তা। শাপলা কে খুঁজতে গিয়ে আটকা পরে যাই সব কেতকি দের জালে। আদি ও অনন্ত কাল ধরে কেতকিরা এমনই। কেউ আসন গারতে চায় না, সবাই বসন চায়। মাঝে মাঝে দুই একজন পাতলা সিগারেট মুখে চেপে ধরে, আলত করে টান দেয়, উপর দিকে ধোঁয়া ছারে। দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিয়ে বলে, হানি, ডু ইউ ওয়ানা গো ফর লং ড্রাইভ? কথা তার মুখ থেকে কান পর্যন্ত পউংছায় না, আলোড়িত হতে থাকে শরীরে। যেন মৃদু ভুমিকম্প। বুকের ভীতরে কাপুনি ধুক ধুক, বুঝতে পারি। হাত ধরতে মন চায়, কিন্তু উঠে না, অবস। মনে মনে ভাবি লং ড্রাইভ, একটা বাই সাইকেল কিনতে পারিনি জীবনে।

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel