• Breaking News

    Unordered List

    Friday, March 17, 2017

    বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তফা কামালের সমাধিতে কিছুসময়....

    বুলবুল আহম্মেদ জয়,

    ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর বর্তমান ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজিপুর গ্রামে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের (Mostafa Kamal) জন্ম। পিতা হাবিবুর রহমান ছিলেন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার। শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হিসেবে খ্যাত ছিলেন বলেই হয়তো পিতার সৈনিক জীবন তাঁকে আকৃষ্ট করে। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়ার পর বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ১৯৬৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ভর্তি হন। কুমিল্লায় ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে তাঁর পোস্টিং হয়। ১৯৭১ সালের প্রথম দিকে এই রেজিমেন্টকে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাঠানো হয়। পঁচিশে মার্চ কালরাত্রি থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যার বিরুদ্ধে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ২৭ মার্চ এই রেজিমেন্ট পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ঘিরে তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলে। দক্ষিণ দিক থেকে নিরাপত্তার জন্য রেজিমেন্টের ২নং প্লাটুনকে আখাউড়ার দক্ষিণে গঙ্গাসাগরের উত্তরে দরুইন গ্রামে পাঠানো হয়। এই প্লাটুনেই ছিলেন সিপাহী মোস্তফা কামাল। কর্মতৎপরতার জন্য যুদ্ধকালীন সময়ে তাঁকে মৌখিকভাবে ল্যান্স নায়েকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সে হিসেবে তিনি ছিলেন দশ জন সৈনিকের সেকশন কমান্ডার।
    [ছবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগরে নির্মিত বীরশ্রেষ্ট মোস্তফা কামালের সমাধিসৌধ। আলোকচিত্রি: অজ্ঞাত। 


    ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। পরদিন ১৭ এপ্রিল ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারির গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নং প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের ২নং প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। হাবিলদার মুনির ১১নং প্লাটুন নিয়ে দরুইনে পৌঁছলে সিপাহী মোস্তফা কামাল তাঁর কাছ থেকে গুলি নিয়ে নিজ পরিখায় অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে শত্রুর গোলাবর্ষণের সাথে শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টিও। সাড়ে ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গাসাগরের শত্রু অবস্থান থেকেও গোলাবর্ষণ শুরু হলো। এবং ১২টার দিকে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ।
    সমাধির পাসে লেখক 
    প্রতিরক্ষার সৈন্যরা আক্রমণের তীব্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়ে এবং মোস্তফার ক’জন সঙ্গি শহীদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। আত্মরক্ষার জন্য অধিনায়কসহ সবাই পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে নতুন অবস্থান সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু পুরো কোম্পানিসহ তাদের সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য মোস্তফা স্থানত্যাগ না করে সাহসিকতার সঙ্গে পূর্ণোদ্যমে এলএমজি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। ফলে শত্রুরা তাঁর সঙ্গিদের পিছু ধাওয়া করতে সাহস পায়নি। একসময় গুলি শেষ হয়ে এলে শত্রুর আঘাতে তিনি লুটিয়ে পড়েন।

    উল্লেখ্য যে, এই  বীরশ্রেষ্ঠর স্মৃতিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহিমান্বিত করে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক তার সমাধিক্ষেত্রে এক অভিন্ন আকার ও ডিজাইনে ভিন্ন  স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এ প্রেক্ষিতে যে ডিজাইনটি নির্বাচিত হয় তা নান্দনিক স্থাপত্যবৈশিষ্ঠ্যে সত্যিই অসাধারণ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিই এর যথাযথ বর্ণনা ও প্রতীকী ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। তবে সাধারণ দৃষ্টিতে প্রতীকীগুলো মোটেও অবোধ্য নয় বলেই মনে হয়। উঁচু ও প্রশস্ত বেদীর উপর একধার ঘেষে সারিবদ্ধ সাতটি স্তম্ভ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠর প্রতীক হিসেবে ভাবা যায় সহজেই। বেদীর দুই-তৃতীয়াংশ অবস্থানে আড়াআড়ি উল্লম্বভাবে তৈরি একটি জাতীয় পতাকার খণ্ডিত আদলে আয়তাকার ক্ষেত্রের মধ্যে ফাঁকা অর্ধ-গোলাকার অবয়ব ছুঁয়ে নির্মিত বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে মানচিত্রের রূপে। একবার দেখলেই বোঝা যায় এটা আমাদের জাতীয় পতাকার সেই অর্ধবিমূর্ত আদিরূপ, যার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি। আর মানচিত্রের নিম্নভাগ ছুঁয়ে পাশের বৃত্তাকার ক্ষেত্রটির মাঝে শ্বেতমর্মরে নির্মিত মূল সমাধি। আমাদের প্রাণপ্রিয় শহীদদের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পাওয়া পতাকা আর তাঁদেরই অবদানে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই দেশ ও জাতির এক চমৎকার প্রতীকী উপস্থাপনা। দেখলেই কেমন করে ওঠে বুক- শ্রদ্ধায় বিষাদে অহঙ্কারে। আরো কিছু নান্দনিক উপস্থাপনা রয়েছে গোটা স্থাপত্যটি ঘিরে। 
    সমাধির পাসে লেখক,
    জাতি হিসেবে শহীদদের প্রতি আমাদের দায়বোধ প্রশ্নহীন। তাঁদের প্রতি আমাদের যথাযথ শ্রদ্ধা প্রদর্শনেও কমতি নেই। তাঁদের সমাধি ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো আমাদের চেতনায় অনুপ্রেরণার উৎস। 
    তথ্য-সহায়তা:
    ১) সাত বীরশ্রেষ্ঠ, বাংলা উইকিপিডিয়া।

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel