বুলবুল আহম্মেদ জয়
ক্ষুদ্র ঋণ কখনোই দারিদ্র্য দূর করার ক্ষমতা রাখে না। বরং দারিদ্র্যকে জিইয়ে রাখে। বা দরিদ্রকে বাঁচিয়ে রাখে। দরিদ্রকে বাঁচিয়ে না রাখলে শোষণ করবে কাকে?। গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এতদিনে দারিদ্র্য দূর হওয়ার কথা ছিল কিন্ত হয় নাই ।
গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মচারী দৈনিক ভিত্তিক কাজের লোক(দাস পন্থা)রেখেছেন যাদের বিন্দু বিন্দু কষ্টে রাত- দিন খাটনির বিনিমেয়ে, গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাদের ভাগ্যের সত্যিকার অর্থে ততটা উন্নতি হয়েছেকি আমি বলছি আমি গ্রামীণ ব্যাংকে কাজ করছি প্রায় এগার বছর আমি দরিদ্র থেকে আর দরিদ্রিত হয়েছি, সেখানে গরিব সদস্যরা ঋণ নিয়ে কিভাবে দ্রারিদ্র মুক্ত হবে?
উপনিবেশিক শাসনামালে ব্রিটিশরা ভারতীয় উপমহাদেশে জমিদার নামের একটি পা-চাটা শ্রেণী তৈরি করে। চিরস্থায় বন্দোবস্ত ও নীল চাষের কারনে উদ্ভব হয় ভূমিহীন কৃষক শ্রেণীর। আর জমিদারদের পা-চেটে আর একটা শ্রেণী মধ্যবিত্ত হিসেবে আবির্ভূত হয়।
বৃটিশরা তাদের পা-চাটা শ্রেণীর (ওই শ্রেণী এখনও বিদ্যমান) হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যাওয়ার পর প্রত্যঞ্চ গ্রামাঞ্চল গুলোতে জমিদারদের আর্শীবাদপুষ্ট সুবিধাভোগী মধ্যবিত্তের অনেকেই গরীব শোষণের জন্য মহাজন হিসেবে আবির্ভূত হন। মহাজনেরা ঋন দিয়ে দরিদ্রদের শোষণ করতে থাকেন। মহাজনেরা কি গরীব কৃষকদের লাখ লাখ টাকা ঋণ দিতেন ? নিশ্চয়ই নয়। তারা যে ঋণ দিতেন সেটা ছিল ক্ষুদ্র ঋণ। ক্ষুদ্র ঋণের উৎপত্তি মহাজনদের হাত ধরে।
এর মানে দাঁড়ালো ক্ষুদ্র ঋণের ফর্মুলা ইউনূস স্যারের কোনো স্বতন্ত্র ধারণা নয়। ড. ইউনূস স্যার মাহাজনদের ওই ধারণারই প্রাতিষ্ঠানিক ও তাত্ত্বিক রুপ দিয়েছেন মাত্র। মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। কাজেই ড. ইউনূস স্যারের আগে গ্রামের সব মহাজনদের সম্মিলিতভাবে একটা নোবেল দেওয়া কি উচিত ছিল না? কিন্তু মহাজনেরা নোবেল পাননি। কারন তারা অশিক্ষিত। ইংরেজী বিদ্যে জানেন না। তাদের ক্ষুদ্র ঋণ ফর্মূলাকে তাত্ত্বিক রুপ দেওয়ার ক্ষমতাও তাদের ছিল না। ব্রিটিশদের আর্শীবাদ তাদের ওপর বর্ষিত হয় নি। হিলারি ক্লিনটনের (অ্যাংলো স্যাক্সন, ওই একই জাত) সঙ্গে তাদের কোনো বন্ধুত্ব নেই। কিন্তু কাজেই ইউনূস স্যার কে সম্মান দেওয়ার আগে আসুন আমরা প্রয়াত ও বর্তমানে যাদের অস্তিত্ব নিভু নিভু সেই সুদখোর মহাজনদের প্রতি একটু সম্মান জানাই। যাদের বাস্তব কর্মকাণ্ডের তাত্ত্বিক রুপ দিয়ে আমাদের ইউনূস স্যার বিরাট! অর্জন করেছেন।
পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় বড় পুঁজির কাছে ছোট পুঁজি সব সময় মার খায়। গ্রামীণ ব্যাংক আসার পর ক্ষুদ্র পুঁজির মহাজনদের ব্যবসা লাটে ওঠে। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের অনুসরণে প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাখ লাখ এনজিও গজিয়ে উঠেছে যারা ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করে মহাজনদের ব্যবসা মেরে দিয়েছেন। মহাজনদের অস্তিত্ব এখন নিভু নিভু। এখন সুদখোর মহাজনেরা তাদের ব্যবসা মেরে দেওয়ার জন্য নিশ্চয় ইউনূস্যার কে দায়ী করবেন। স্বভাবতই তারা ক্ষিপ্ত হতে পারেন।
এ কারনেই আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছে, ড. ইউনূসের ওপর কি সুদখোর মহাজনদের অভিশাপ রয়েছে?
No comments:
Post a Comment