বুলবুল আহম্মেদ জয়
ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের বড় কীর্তি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা। গরিব মানুষের বাঁচারও ঋণ পাওয়ার অধিকার আছে– এই ধারণাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। বলা হয়ে থাকে, ড. ইউনূস উদ্ভাবনী উপায়ে ভূমিহীন দরিদ্ররে ক্ষমতায়ন করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের মডেল পৃথিবীর অনেক দেশই অনুসরণ করছে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি অনেক সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করেছেন,আমার কথা তথা আমার মত তিন হাজার গরিব গ্রামীণ ব্যাংকের কমর্চারির (দৈনিক ভিত্তিক কাজের লোক) এর কথা
ড. ইউনূস স্যার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ঋণ গ্রহীতাদের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ড. ইউনূসের শ্রম ও মেধা এই প্রতিষ্ঠানটিকে আজকের অবস্থায় এনে দাঁড় করিয়েছে। দরিদ্র অসহায় নারীদের ভাগ্যোন্নয়ন বা ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকের ২০ তলা একটি আলীশান ভবন হয়েছে রাজধানীর মিরপুরে, এটা কি কম বড় সাফল্য! তবে যাদের বিন্দু বিন্দু কষ্টে রাত- দিন খাটনির বিনিমেয়ে, গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাদের ভাগ্যের সত্যিকার অর্থে ততটা উন্নতি হয়েছেকি সেটা নিয়ে বিতর্ক আছে। ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্র নারীদের দারিদ্র্যমুক্ত করে ক্ষমতায়িত করছে, না তাদের ঋণজালে বেঁধে শৃঙ্খলিত করছে– সে প্রশ্নের সহজ জবাব নেই।আমি বলছি আমি গ্রামীণ ব্যাংকে কাজ করছি প্রায় এগার বছর আমি দরিদ্র থেকে আর দরিদ্রিত হয়েছি, সেখানে গরিব সদস্যরা ঋণ নিয়ে কিভাবে দ্রারিদ্র মুক্ত হবে?
ড. ইউনূস স্যারও গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে দেশে দেশে এত হৈচৈ, অথচ তার প্রতিষ্ঠানের চতুর্থত শ্রেণীর কর্মচারীরা ও গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যরা এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কতটা উপকৃত হয়েছেন? তাদের অবস্থা ও অবস্থানের সত্যিকার অর্থে কী পরিবর্তন হয়েছে তার কোনো বিশ্বাসযোগ্য গবেষণা আজ পর্যন্ত হয়েছে কি? ড. ইউনূস স্যার উদ্যোগী হয়ে কেন এই কাজটি করেন নি? গ্রামীণ ব্যাংকের যে লাখ লাখ সুবিধাভোগীর কথা বলা হয় তাদের ঋণ সুবিধা নেওয়ার আগে-পরের অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য কি পাওয়া যায়?
ড. ইউনূস গরিবকে তার অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সহায়তার নামে অল্প সামান্য টাকা ঋণ দিয়ে এবং দেশের দ্রারিদ্র ছেলেদের কাজের লোক বানিয়ে ২৪ ঘন্টা অবিরাম শোষণের যে প্রক্রিয়া চালু করেছেন তাতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রক্ষকরা তাজ্জব বনে গেছেন ড. ইউনূস স্যারকে নিয়ে তাদের এত মাতামাতি। এই ব্যাখ্যাটি কি তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দেওয়ার মতো?
গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে জামানত গ্রহণ, ঋণদান প্রক্রিয়া, সুদের হার ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এটা এক মারাত্মক দুষ্টচক্র। এর মধ্যে একবার ঢুকলে বের হওয়া কঠিন। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। গ্রামীণ ব্যাংকের অভ্যন্তরে আমাদের (পিওনের)কাজের অনিয়ম-অব্যবস্থার অভিযোগও নতুন নয়। ড. ইউনূস যদি তার সম্মানের দিকটি নিজে থেকে বিবেচনায় নিয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতেন, তাহলে সেটাই হতো উত্তম।
কিন্তু করার জন্য নিজে তো উদ্যোগ নেননি, পরবর্তীতে তার দালালরা ও উদ্যোগ নেয়নি।
ড. ইউনূস স্যারের পক্ষ নিয়ে যারা বলছেন এবং লিখছেন তাদের মূল কথা হলো, তার মতো একজন মর্যাদাবান মানুষের পেছনে লেগে সামান্য পিয়ন! মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, পিওন ড. ইউনূসের পেছনে লেগেছে, না ড. ইউনূস পিওনের পেছনে লেগেছেন?
No comments:
Post a Comment