ব্লগার বুলবুল আহম্মেদ জয়
মা বকবক করে তাঁর জায়গায় গিয়ে দেয় ঘুম ৷ আর আমার শুরু হয় মোবাই নিয়ে টিপাটিপি, প্রথম কন্ঠ ব্লগ নিয়ে ৷ এই ব্লগ যেন আমায় জাদুটোনা করে বসলো, কিছুতেই পারছি না ব্লগটাকে ছেড়ে থাকতে ৷ মার প্রশ্ন: কী কর সারারাত জেগে জেগে? তাকে বলি যা করি তা আপনাকে বোঝালেও আপনি বুঝবেন না, কাজেই প্রশ্ন করবেন না ! তারপরেও বকবক, বাধ্য হয়ে’ই বলতে হয় ব্লগে লেখি আর মন্তব্য দেই ৷ আমার প্রিয় মানুষগুলি যেখানে থাকে আমি সেখানে থাকি ৷
মা চমকে উঠে বলে ব্লগ? দেখ তুমি ব্লগে কিছু লেখবে না, দোহাই তোমার, জাগায় জাগায় বর্তমানে ব্লগারদের কী অবস্থা, দেখ তুই ব্লগে কিছু লেখবে না ৷ বললাম আরে না-না তুমি চিন্তা করবে না, এটা খারাপ কিছুই না, এই ব্লগে আমার অনেক পরিচিত লোক অাছে, তাদের সাথে একটু সময় দেই, এছাড়া আর কিছুই নয় ৷ তবু বকবক আর শাসানি, এক সময় মন চায় দূর’ আর ব্লগে কিছু লিখবই না, কী দরকার, আর কী হবে লিখে? তবু পারিনা ছাড়তে, ব্লগে প্রবেশ করতে না পারলে আর ভালোই লাগে না ৷
ভোর পাঁচটা পর্যন্ত চলে মোবাইল নিয়ে টিপাটিপি, আর ব্লগে ঘোরাঘুরি ৷ সকল ব্লগারের পোস্টগুলি দেখি, পড়ি, দুএকটা পোস্টে পারলে মন্তব্য দেই, না পারলে আর দেই না ৷ নিজে কিছু লিখলে লেখি, না লিখলেও ব্লগেই আনাগোনা করতে থাকি ভোরবেলা পর্যন্ত ৷ ব্লগে আমায় কি জাদু করেছে নাকি? না’ জাদু-টোনার কিছুই নয়, এটা হয়েছে একপ্রকার নেশা, আর আমি হয়ছি নেট নেশাগ্রস্ত একটা মানুষ ৷ যেখানেই থাকি, যেভাবে থাকি শধু প্রথম কন্ঠ ব্লগ আর ব্লগ ৷
প্রতিদিন অফিসের কাজে আমাকে বাহির হতে হয় কত মানুষের সাথে কথা বলতে হয়, কথা বলছি আর ব্লগে কে কী পোস্ট করছে তা দেখছি ৷ দোকানিরা বলে, বাবু আপনি সর্বক্ষণ শুধু মোবাইল টিপাটিপি করেন তো ঘুমান কোন সময়? প্রত্যুত্তরে বলি, ভোরবেলা ২ ঘন্টা ৷ সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে, তখন আমার বিষণ লজ্জা হয় ওইসব মানুষগুলির দিকে চাইলে ৷
সকালবেলা যখন অফিসে আসি, তখনও ঘটে বিপত্তি, কখনো হিসাবে ভুল, কখনো বসের কথায় হয়ে যায় রাগারাগি ৷ কী যে হলো কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা ! হলো’টা কী? আগে তো এমুন ছিলাম না! এখন এমন হলো কেন? মোবাইল না টিপলেও রাতে ঘুম হয়না, সারারাত চোখ বুলিয়ে থাকতে হয় ৷ এভাবে সজাগ থাকতে থাকতেই মনে পড়ে যায়, আমার প্রিয় ব্লগারদের কথা, তখনই নিজের ডায়ারি খানা হাতে নিয়ে প্রিয় ব্লগারদের নাম সংবলিত লিস্টখানায় চোখ বুলিয়ে নেই, যেই লিস্টে আছে ৩৫০ জন প্রিয় ব্লগারদের নাম ৷
এভাবে সারারাত এক কাঁত হয়ে থাকতে থাকতে আমার বামহাতখানা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে, আমার অফিসের বস আমাকে ডাক্তারের কাছেও নিয়েছিল চিকিৎসার জন্য ৷ ডাক্তারের পরামর্শ হল, সারারাত এভাবে সজাগ থাকা যাবে না ৷ কে শুনে কার কথা, যে কপাল সেই মাথা ৷ আমি হলাম একজন নেট নেশাগ্রস্ত লোক, ওইসব ডাক্তারি পরামর্শে কি আর কাজ হয়? মোটেই না! আমার ডাক্তার আমি নিজেই ৷ হাত অবশ হয় হোক তাতে কী? নেশা’তো সামলাতে হবে? একসময় ভাবি, এর চাইতে মাদকাসক্তও ভাল, টাকা আছে মাদক নাই, বসে থাক ঝিম ধরে, পাবে তো সেবন করবে ৷ আর আমি তার চেয়েও এখন বেশি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি এই এন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে ৷ এমতাবস্থায় যদি কোন দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে না পাড়ি, তো আমার হবে নির্ঘাত মৃত্যু ৷ মৃত্যু হলেও ক্ষতি কী? এই ব্লগে খারাপ লেখি, আর ভাল লেখি, লেখাগুলো তো থেকে যাবে চিরকাল ৷
No comments:
Post a Comment