• Breaking News

    Unordered List

    Saturday, March 3, 2018

    এ যুদ্ধ মানবতার "

    বুলবুল আহম্মেদ জয়
    আমরা জানি যে,  অধ্যাপক ড.  মুহাম্মদ জাফর ইকবাল একজন মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী মানুষ। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ হিসাবেও তাঁর পরিচিতি রয়েছে সমাজে।  এই সমস্ত কারণে তিনি ছিলেন মৃত্যু ঝুকির মধ্যে। এর পূর্বেও  তাঁকে  হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে, পাঠানো হয়েছে কাফনের কাপর,  শাবির ক্যাম্পাসের বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছিল এমনকি উনার দুই সন্তানকে সিলেটে বসবাস করার সময় অপহরণের হুমকিও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু নিষ্ঠাবান এই মানুষটিকে তবুও দমানো যায়নি।শত্রুর নিশানার মধ্যেই তিনি তাঁর  বিশ্বাসকে জাগিয়ে রেখে এগিয়ে গেছেন।

    সরকার তাঁর নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিলেন। কিন্তু ছাত্র শিক্ষক পরিবেষ্টিত অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতেই তিনি হত্যাচেষ্টার শিকার  হলেন । হামলাকারী খুব কাছ থেকে তার উপড় হামলা চালিয়েছে। এই সময় সে নিজেও যে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ছিলো তা বলার অবকাশ রাখে না। আপাত দৃষ্টিতে তাকে আত্মঘাতি হামলাকারী হিসাবেই মনে হচ্ছে।



    হামলাকারীকে ধরে গনধোলাই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে হামলাকারীর নাম ফয়জুর রহমান বলে জানা গেছে। সে একজন মাদ্রাসা ছাত্র বলেও জানা গেছে।হলিআটিজেনের ভয়াবহ ঘটনার পর  আইন শৃংখলা রক্ষা কারী বাহিনীর  জঙ্গী নিধনের সফল অভিযানগুলো মানুষের মনে একটু শান্তি এনে ছিলো। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায়  মানুষ আবারো বিচলিত বোধ করছে। কথা  হচ্ছে নানামূখী। কেউ বলছেন এটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নয়, বরং পূর্ববর্তী ঘটনার পুনরাবৃত্তি। কেউ কেউ আবার বলতে চাইছেন সরকার ব্যার্থ হয়েছে জাফর ইকবালকে নিরাপত্তা দিতে। পূর্ববর্তী ঘটনাগুলোর বিচারের দীর্ঘসূত্রিতাকেও কেউ কেউ জঙ্গীদের এহেন হামলা পরিচালনার নিয়ামক শক্তি বলে মনে করছেন।নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার একটি অংশ হিসাবেও এই ঘটনাটিকে দেখছেন কেউ কেউ। আগামী ৭ মার্চের আওয়ামী লীগের সমাবেশকে সফল হতে না দেয়ার ষড়যন্ত্রের কোন অংশ এটি কিনা তাও আলোচনায় এসেছে। কারণ যাই হোক আলোচ্য হত্যাচেষ্টার ঘটনাটি আমাদেরকে কিছু সত্যের মুখোমুখি করে দিয়েছে।

    আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের চর্চা জোড়ালো ভাবেই চলছে। সময় সুযোগ মত তারা তাদের উদ্দেশ্য ঠিক হাসিল করে নিতে জানে। এখন দেখার বিষয় এদের কর্মকান্ডে কারা কারা লাভবান হচ্ছে। এই ধরণের ঘটনাকে ইস্যু বানিয়ে কারা অর্থনৈতিক বা সামাজিক ভাবে  নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। ইতোমধ্যেই সে প্রক্রিয়া শুরুও হয়ে গিয়েছে। বার বার তাই ঘটেছে।জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার সুযোগ আমরা অনেক বার পেয়েছি, কিন্তু সে সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। কখনো টাকার কাছে বিকিয়ে গেছে আন্দোলন, কখনো আমিত্বের অহংকারের কাছে তুচ্ছ হয়ে গেছে গণদাবী কখনওবা  নিজেদের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা  শত্রুকে বন্ধু ভেবে কাছে টানার অপরিনাম দর্শী সিদ্ধান্ত উড়িয়ে দিয়ে গেছে প্রতিবাদের ঝড়। আজ আবার সময় এসেছে। একটা সম্মিলিত আন্দোলন শুরু করার এখনি উপযুক্ত সময়। ছোট ছোট ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তৈরী করতে হবে একটা শক্তিবলয়। জঙ্গীবাদ বিরোধী এই বলয় রাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াবে , সহযোগীতা করবে। আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবেই যে,  জঙ্গীবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা, এটি সরকারের একার পক্ষে মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। তার পাশে অবশ্যই থাকতে হবে একটি সচেতন শক্তিশালী জঙ্গীবাদ বিরোধী জনগোষ্ঠীকে। আর সেই  সচেতন জনগোষ্ঠী তৈরীর গুরু দায়িত্ব নিতে হবে সমাজের অগ্রসর অংশকে। নিজেদের ভেদাভেদের কারণে যদি এবারো তারা ব্যার্থ হয়, তাহলে ইতিহাস তাদেরকে কখনই ক্ষমা করবে না। জঙ্গীবাদকে পরোক্ষ মদত দানের দায় থেকে তারা ক্ষমা পেতে পারেন না কারণ  এই অংশের বিভেদের সুযোগ কিন্তু জঙ্গীবাদের বিকাশের পথকেই সুগম করে।

    আমরা সাধারণ মানুষেরা তাকিয়ে রইলাম সেই সুসময়ের দিকে, আমরা আবারো বিশ্বাসে বুক বাঁধলাম এই ভেবে যে,  একটি সুসংগঠিত  জঙ্গীবাদ বিরোধী শক্তি বলয় থেকে আমরা ডাক পাব পথে নামার, আর এর মাধ্যমেই এই অপশক্তিকে রুখে দিয়ে আমরা নিশ্চই সভ্যতার চাকাকে সামনে নিয়ে যেতে পারবো। মনে রাখতে হবে এ যুদ্ধ সরকারের একার না। এ যুদ্ধ আমার আপনার সবার।এ যুদ্ধ মানবতার।

    No comments:

    Post a Comment

    Fashion

    Beauty

    Travel