মিতা".. সোশ্যাল মিডিয়া ক'দিন যাবত্ তোলপাড় এই নাম নিয়ে । মৃত্যু সবসময়ই বেদনাদায়ক । তার উপর যদি এইরকম নৃশংসতা থাকে কোনো মৃত্যুর সঙ্গে, তা সত্যিই মেনে নিতে বড্ড কষ্ট হয় ।
মিতাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না, কিন্তু মিতার ঘটনা পড়ার পর আমার চেনাজানা অনেকের কথা মনে পড়ে গেলো আমার । নাহ্, তারা শারীরিকভাবে সবাই এখনো জীবিত, কিন্তু মানসিকভাবে তারা রোজ হয়ত একবার করে মরে।
মিতা কৃতী ছাত্রী ছিল। তার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা শুনেছি ভালো ছিল না। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছিল। স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করার পরই তার বিয়ে হয়ে যায় তারই পছন্দ করা এক ছেলের সাথে । দুর্ভাগ্যবশত ছেলেটি মদ্যপ, রগচটা। আচ্ছা, মিতার মা বাবা যখন জেনেছিলেন ছেলেটির চরিত্র ও প্রকৃতি সম্পর্কে, ওনারা ওনাদের মেয়েকে কি একবারও সাবধান করেছিলেন?? নাকি বেশীরভাগ বাবা মা এর মতোই বলেছিলেন-"বিয়েটা যখন হয়েই গেছে, মানিয়ে চল.. নাহলে লোকে কি বলবে?"
"লোকে কী বলবে??"- আমার মনে হয় মিতা আর মিতার মতন হাজার হাজার মেয়ের মৃত্যুর সবথেকে বড় কারন এই "লোকে কি বলবে??" আমাদের মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই এই কথা শুনে শুনে বড় হতে হয়- এটা করো.. নাহলে "লোকে কী বলবে??" এটা কোরো না, তাহলে "লোকে কী বলবে??" । আমরা লোকের কাছে ভালো হতে গিয়ে ভালো থাকতেই ভুলে যাই। বেশী ভালো থাকলেও মাঝে মধ্যে মনে হয় "লোকে কী বলবে!!"
লোকে কী বলবে??"- আমার মনে হয় মিতা আর মিতার মতন হাজার হাজার মেয়ের মৃত্যুর সবথেকে বড় কারন এই "লোকে কি বলবে??" আমাদের মেয়েদের ছোটবেলা থেকেই এই কথা শুনে শুনে বড় হতে হয়- এটা করো.. নাহলে "লোকে কী বলবে??" এটা কোরো না, তাহলে "লোকে কী বলবে??" । আমরা লোকের কাছে ভালো হতে গিয়ে ভালো থাকতেই ভুলে যাই। বেশী ভালো থাকলেও মাঝে মধ্যে মনে হয় "লোকে কী বলবে!!"
মেয়ে হয়ে জন্মানোই যখন এত ঝক্কির, সেই মেয়ে যদি শ্বশুরবাড়ির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসে, সেই অপরাধে তাকে আরও যে কত সামাজিক অত্যাচার সহ্য করতে হয় তা ভুক্তভোগী মাত্রই বোঝে। আসলে অত্যাচারের থেকে অনেক বেশি অপরাধ হয়ত সেই অপরাধ সহ্য করতে না পারা। তাই কখনো কখনো সামাজিক অত্যাচার, লাঞ্ছনা, অপমানের থেকে শরীরের কালশিটে দাগ শ্রেয় বলে মনে হয় । আর সব অত্যাচার তো শরীরে দাগ কাটে না, মনকে ছিন্নভিন্নও করে কিছু আঘাত।
এক সময় সমাজে নারীর প্রতি অবিচার অপরাধ সহিংসতা আমাকে ক্ষুব্দ করে তুলতো। কিন্তু যত বড় হতে থাকলাম দেখলাম নারীর আসল শত্রু পুরুষ নয়। নারীর শত্রু নারীই হয়।
একজন মা তার ছেলের বিয়ের যৌতুকে বাধা দেয় না বরঞ্চ সেও দাবী করে। একজন স্বামীর অসদোপার্জনে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। স্বামীর দুর্নীতিতে স্ত্রী উৎসাহ যোগায় বা তাকে চাপে রেখে বাধ্য করে। শ্বশুড়বাড়ীতে এ পর্যন্ত যত বধূ নির্যাতন হয়েছে তার সিংহভাগ ঘটেছে নারীদ্বারা। শ্বাশুড়ী, ননদ, জা থেকে সব নারীই বধূ নির্যাতন, নিপীড়নে যুগে যুগে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। কন্যা শিশু জন্মালে প্রথম যে বেশী অখুশী হয় সে হচ্ছে শ্বাশুড়ী বা মা। আর বাপ মনে করে ঘরে লক্ষ্মী এসেছে। যত কুসংস্কার লালন পালন হয়েছে তা বহন করছে নারীই।
এখনো দেখা যাবে একজন নারীর চরিত্র নিয়ে যত সমালোচনা গীবৎ গাওয়া হয় তার ধারে কাছেও পাওয়া যাবে না পুরুষকে। নারীই নারীর চরিত্রে কলংক লেপন করে। সমাজ হয়তো পুরুষ শাসিত, কিন্তু নারীদ্বারা শোষিত। দিন পালটে গেছে পুরুষ শাসিত সমাজ না বলে নারী শোষিত সমাজ বলাই উত্তম হবে। পর্দার আড়ালে কল কাঠি নাড়ে নারী, সামনে থাকে পুরুষ।
"ভাই বড় ধন রক্তের বাঁধন
যদিও পৃথক হয় নারীর কারন।"
আচ্ছা, আজ কোনোভাবে মিতা বেঁচে যেত, ওর পরিবার কি ওকে কখনো বলত যে- আর ফিরে যাস না মা, "আমরা তো আছি" ।। বিশ্বাস করুন আমরা মেয়ে হয়ে আর কিচ্ছু চাই না.. শুধু এইটুকু চাই যে আমাদের পরিবার, আমাদের কাছের মানুষরা..আমাদের শুধু এইটুকু আশ্বাস দিক যে তারা আমাদের সাথে আছে। "লোকে কী বলবে ?" এই চিন্তা থেকে একটু সরে দয়া করে একটু আমাদের পাশে থাকলে হাজার হাজার মিতারা হাসি মুখে একটু বাঁচতে পারে ।। আর যদি লোকলজ্জার ভয়ে পাশে থাকতে না পারেন তবে দয়া করে "খুনীর শাস্তি হোক" -এই দাবি তুলবেন না । কে বলতে পারে পরোক্ষভাবে আপনারাও সেই শাস্তি পাবেন না ?
মিতা মণ্ডল খুন হল। সরকার তার পরিবারের একজনকে চাকরি দেবে। কেন? তারা কেন চাকরি চাইছে। সরকারের মূল কাজ অপরাধীদের ধরা। কিন্তু চাকরি কেন? এরপর তো লোকে বোন খুন করবে।
বুলবুল আহম্মেদ জয়
No comments:
Post a Comment