• Breaking News

    Unordered List

    Sunday, January 29, 2017

    ফকির লালন শাহ- অচিন পাখি আর সেই অচিন মানুষ

    বুলবুল আহম্মেদ জয়,

    চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি.....
    ভেদ পরিচয় দেয় না আমায়......
    ঐ ক্ষেদে ঝরে আঁখি..........
    বা
    খাঁচার ভিতর অচিনপাখি কেমনে আসে যায়?
    আমি ধরতে পারলে মনোবেড়ি দিতাম পাখির পায়....

    সেই অচিনপাখির দেখা পায়নি সে। আমি তুমি বা সে কেউই হয়তো তার দেখা পায়না। তবে ক'জনায় পারে তার মত করে এই অচিনপাখিকে অনুধাবন করতে? সেই রহস্যময় অচিনপাখির খোঁজে ছুটে চলা মানুষটির জীবন যাপন, তার আবির্ভাব, দর্শন , আধ্যাত্মিক ধ্যান ধারনা ও মতবাদও আমার কাছে কম রহস্যময় নয়। এ রহস্যময় মানুষটির দর্শন আজীবন মুগ্ধ করেছে আমাকে।

    ফকির লালন শাহ!! লালন গীতির রচয়িতা-গুরু। বাউল সাধনার সম্রাট তিনি। আধাত্মিক ব্যাক্তিত্বের এক জাজ্বল্যমান নক্ষত্র!! ধর্ম, জাঁত পাতের উর্ধে তার অবস্থান।
    ১১৭৯ বঙ্গাঙ্গের ১ কার্তিক -১৭৭২,১৪ অক্টোবর ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবার নাম দরীবুল্লাহ দেওয়ান, মায়েরর নাম আমিনা খাতুন। লালন খুব ছোটবেলায় বাবা মাকে হারান । এরপর এক আত্মীয় ইনু কাজীর বাড়িতে আশ্রয় নেন।

    সে সময় একদিন তিনি ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে এক গাছের ছায়ায় বসে ছিলেন। তখন সেখানেই কুলবাড়িয়ার সিরাজ সাঁইয়ের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নিঃসন্তান সিরাজ সাঁই এতিম লালনকে পালক সন্তান হিসেবে নিয়ে যান । সিরাজ সাই ধর্মে ছিলেন মুসলমান।

    লালনকে সিরাজ সাঁই বাউল মতবাদে দীক্ষা দেন। নিরক্ষর লালন বিষ্ময়কর তত্ত্বজ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তাঁর ছাব্বিশ বছর বয়সে ১২০৫ সনে, ইংরেজী ১৭৯৮ সালে সিরাজ দম্পত্তি মৃত্যুবরণ করেন।
    অল্প দিনের মধ্যেই লালন গৃহত্যাগ করে ফকিরী বেশে নবদ্বীপ চলে যান।

    নবদ্বীপ পৌছে তিনি পদ্মাবতী নামে এক বৈষ্ণব বিধবা মহিলার কাছে আশ্রয় নেন। তিনি তাকে“মা’ বলে ডাকতেন। এখানে তিনি দীর্ঘ সাত বছর কাটান। লালন নবদ্বীপে যোগী ও তান্ত্রিক সাধকদের ঘনিষ্ট সান্নিধ্যে আসেন। এখানেই তিনি বৈষ্ণব শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন।
    ১৮০৫ সালে লালন নবদ্বীপ হতে কাশী, বৃন্দাবন, পুরী এসব জায়গায় তীর্থ ভ্রমন করেন। দশ বছর পর তিনি ১৮১৫ সালে নদীয়ায় ফিরেন। এসময় একবার উত্তর বঙ্গের খেঁতুরীর মেলা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে তিনি গুটি বসন্তে আক্রান্ত হন। শোনা যায়, তাঁর সঙ্গীরা তাঁকে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া গ্রামে কালীগঙ্গা নদীর পাশে ফেলে রেখে যায়।

    ঐ গ্রামের তাঁতী সম্প্রদায়ের মলম কারিগর অসুস্থ লালনকে নিজের বাড়িতে নিয়ে সেবাযত্বে সুস্থ করে তোলেন। এ সময়ে তাঁর একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। মলম কারিগর লালন শাহের সাধনা সম্পর্কে জানবার পর তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। নিজ বাড়ীর ষোল বিঘা জমি লালনকে উইল করে দেন। কুষ্টিয়া শহরের অদূরে ছেঁউড়িয়ায়, সেখানেই গড়ে উঠে লালনের আখড়া।

    লালন শাহ ছেউড়িয়াতে স্ত্রী ও শিষ্যসহ বাস করতেন কিন্তু তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের ১ কার্তিক, ১৭ অক্টোবর, ১৮৯০ ছেঁউড়িয়াতেই মারা যান লালন। তাঁর ঘনিষ্ঠ শিষ্য দুদ্দুশাহের বক্তব্য অনুযায়ী লালনের জীবন সম্পর্কে এমনই তথ্য পাওয়া যায়।

    তবে লালনের জন্ম ইতিহাস ও জীবনি নিয়ে পন্ডিত ও গবেষকদের মধ্যে কিছু মতানৈক্য রয়েই গিয়েছে। এমনও শোনা যায়, লালন শাহ প্রকৃতপক্ষে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর ভাঁড়রা গ্রামে এক কায়স্থ বাড়িতে জন্ম নেন। তিনি এক তীর্থভ্রমণে যাবার পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। তখন সঙ্গীরা তাঁকে পরিত্যাগ করে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। এমতাবস্থায় সিরাজ সাঁই নামে একজন মুসলমান ফকির তাঁকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে সেবা-শুশ্রূষা করে সুস্থ করে তোলেন। এরপর লালন তাঁর কাছেই বাউলধর্মে দীক্ষিত হন।

    লালন শাহের স্ত্রীর নাম ছিল বিশাখা। তাঁর স্ত্রীর নাম সর্ম্পকেও রয়েছে নানা মতভেদ। ছেউড়িয়ায় লালন শাহের কবরের পাশেই দেখা যায় তার কবরটিও। লালন শাহ ছিলেন নিঃসন্তান তবে পিয়ারী নামে ছিলো তার এক ধর্মকন্যা।

    প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায়,মার্চ-এপ্রিল মাসে ও তার মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজার হাজার ভক্তেরা তার মাজারে সমবেত হন এবং তিনদিন ধরে সাধুসেবা ও সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

    কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ার অদূরেই শিলাইদহে অবস্থিত রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালন শাহের ২৯৮টি গান সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো থেকে ২০টি গান তিনি প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের কিছু কিছু গানে লালনের গানের কথা ও সূরের প্রভাব দেখা যায়। তিনি মানবধর্ম বিষয়ক প্রবন্ধ ও বক্তৃতায়ও লালনের গানের উল্লেখ করেন। এক কথায় রবীন্দ্রনাথই লালনকে বাঙালি শিক্ষিত সমাজে পরিচিত করান।

    লালন কোনো স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেন নি। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না তার , কিন্তু কি যাদুবলে, নিজ সাধনায় তিনি হিন্দু-মুসলমান বৌদ্ধ খৃষ্ঠান সকল ধর্মের উর্ধে এক গভীর জ্ঞান সাধনায় মগ্ন হয়েছিলেন। তাঁর গানে আধ্যাত্মিক ভাবধারার প্রভাব দেখা যায়। তিনি প্রায় দু'হাজার গান রচনা করেন। সহজ-সরল শব্দ আর গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবধারায় মানবজীবনের আদর্শ, মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ দেখা যায়। কোনো জাতিভেদ মানতেন না তিনি।
    সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে
    লালন কয় জাতের কি রূপ দেখলাম না এ নজরে।
    ঠিক এমন সব সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদহীন, সর্বজনীন ভাবরস সমৃদ্ধ লালনের গান বাংলার হিন্দু-মুসলিম সকল সম্প্রদায়ের মানুষের কাছেই সমান জনপ্রিয়। লালনের নিজ হাতে লেখা গানের কোনো পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়না। সম্ভবত পরবর্তীকালে শিষ্যদের কেউ সেগুলো সংগ্রহ ও সংকলিত করেন।

    বাংলার এ সহজ সরল কিন্তু রহস্যময়জীবনের অধিকারী, অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন, উদার ও মহা দার্শনিক মানুষটির প্রতি জানাই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

    2 comments:

    1. This comment has been removed by the author.

      ReplyDelete
    2. কিছু মানুষের জন্মই হয় সুন্দরের বস্তা নিয়ে। ধরনীতে তারা যা কিছু করবে সব কিছুই সুন্দর হবে। তারা থুতু ফেললেও লোকেরা সুন্দর বলে বাহাবা দিবে। কিন্তু কিছু মানুষ মন খুলে হাসতেও পারবে না ! হাসলে তাদের চোরের মত লাগবে। জীবনে সে সিগারেট খায়নি অথচ তাকে গাজা খোর বলা হবে।বিনা কারনে তাকে থামিয়ে চেক করা হবে বার বার কিছু না পেলেও তাকেই অপরাধী ভাবা হবে। কিছু মানুষ কুৎসিত বলে তারা সাজতেও পারবে না। অকারনে তাকে কুৎসিত, খ্যাত, নাক কাটা, শুটকি মুটকি বলে ডাকা হবে। ফেসবুক বা বন্ধুদের আড্ডায় তাদের নাম দেওয়া হয় "ময়দা সুন্দরী " কি করবে তাহলে তারা? সুন্দর মানুষদের পিছনে গিয়ে দাড়াবে? ফেসবুকের প্রোফাইল পিকটা ফুলের দিবে? লুকিয়ে হাসবে তারা? মাথা নিচু করে হাটবে? বিশ্বাস করেন আল্লাহ কারোর প্রতি জুলুম করেন নি! আল্লাহ মানুষদের রুপ না দিলেও অন্য কিছু তো দিয়াছে! এই দুনিয়াতে কেউ সাধারন হয়ে জন্ম গ্রহন করেনি।সকলেই অসাধারন। আল্লাহ মানুষদের সেরা করেছেন। তিনি বলেনি পশ্চিমা ও আরবে রা সেরা।

      ReplyDelete

    Fashion

    Beauty

    Travel